ইয়াবা পাঁচারের নতুন রুট খুঁজছে মাদক সিন্ডিকেট

ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট – সর্বনাশা মাদক ইয়াবা’র বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাস থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে পাচারের রুট পরিবর্তন করছে মাদক সিন্ডিকেটগুলো। স্থল পথের নতুন রুটে ইয়াবা পাচারের তত্পরতা সম্পর্কে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খোঁজ-খবর নিচ্ছে। ইয়াবা পাচারের উত্সস্থল মিয়ানমার থেকে সমুদ্র পথে বাংলাদেশে এই মাদক পাচারের রুট আগের মতোই আছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

গত বছর মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে কক্সবাজারের টেকনাফ ভিত্তিক মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো খানিকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বন্দুক যুদ্ধে নিহতও হয় বেশ কয়েকজন কুখ্যাত পাচারকারী। গত বছরই চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দে ইয়াবা ও মাদক কারবারের অন্যতম স্পট বরিশাল কলোনী সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন। ইয়াবার অন্যতম ল্যান্ডিং স্টেশন বরিশাল কলোনী উচ্ছেদ হওয়ার পর মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রামে ইয়াবা পাচারের পূর্বতন নেটওয়ার্কে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। ইতোমধ্যে ইয়াবা পাচার ও বিপণনকারী চক্র ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও নানাভাবে তারা স্থলপথে নতুন রুট তৈরির চেষ্টা করছে বলেও জানা যায়। ফলে গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিতেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাচারকারী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উদঘাটন করেছেন পাচারকারীদের অভিনব সব পদ্ধতি।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের সাঁড়াশি অভিযানের পর পুরনো পথে ইয়াবা পাচার ব্যাপকভাবে কমেছে। তবে কিছু কিছু চালান এখনো ধরা পড়ছে বলে, বলা যাবে তাদের তত্পরতা এখনো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামিম আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, টেকনাফ ভিত্তিক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। সেখান থেকে পুরনো রুটে ইয়াবা পাচার কার্যক্রমে ব্যাপক ভাটা পড়েছে। তাদের তত্পরতা প্রায় ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মাদক পাচারকারীরা বর্তমানে স্থলপথে তাদের রুট পরিবর্তন করে পার্বত্য এলাকা ভারতের মিজোরাম, সেভেন সিস্টারস ব্যবহার করে সরাসরি নিয়ে যাচ্ছে কলকাতায়। সর্বশেষ ইয়াবার একটি বড় চালান ধরা পড়েছে পটুয়াখালীতে প্রায় তিন মাস আগে।

শামিম আহমেদ জানান, সমুদ্র পথে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের রুটটি আগের মতোই রয়ে গেছে। পাচারকারীরা মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ থেকে স্পীবোটে বুচিডং ছেরাদ্বীপে প্রথমে আসছে। সেখানে আসার পর তারা পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। ঐ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পাচারকারীরা গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত বাংলাদেশের পাচারকারীদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ৭০ অশ্বশক্তির দ্রুতগামি স্পীটবোটগুলো ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশের ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা ও ট্রলারে অবস্থানরত পাচারকারীদের কাছে। তারা আনোয়ারার বিভিন্ন ঘাট, রাইপুরা ইত্যাদি পয়েন্ট ব্যবহার করে। বর্তমানে বিকল্প রুট হিসাবে বিমানবন্দর ও আকাশপথ ব্যবহারেরও নজীর পাওয়া গেছে। এছাড়া মহেষখালী থেকে আনোয়ারা হয়ে নৌপথে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকায় আসা চালানও সম্প্রতি ধরা পড়েছে। কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমুদ্রপথে ইয়াবার চালান ঢোকার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তবে সরকারের নির্দেশে জলপথে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। ইত্তেফাক